Free Essay

Gingablala

In:

Submitted By Heroalom
Words 756
Pages 4
কঠিন বাস্তবতা আর কিছু স্বপ্ন
দৃশ্য ১
(গুলশানের একটি জনাবহুল সড়ক। অসংখ্য যানবাহন আর অগণিত রিকশা। একটি তরুণী রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে রিকশা খোঁজ করছে।)
আনিকাঃ এই রিকশা, বাড্ডা যাবে?
রিকশাওয়ালা ১: না জামুনা। বহুত জাম আফা রুডে।
আনিকাঃ কই জ্যাম? শাহজাদপুর পেরুলেই জ্যাম থাকেনা।
রিকশাওয়ালাঃ তবু আফা জামুনা, জাম আর গরমের লাইগা জান বাইর হই যায়তেসে।
আনিকা আজকেও অফিস থেকে বের হয়ে রিকশা পাচ্ছেনা। রিকশাওয়ালারা কেউ যেতে চায়না জ্যামের অজুহাতে আর কেউ ভাড়া ইচ্ছে মত বারিয়ে বলে। ইউনিভার্সিটি পোঁছাতে হবে ২০ মিনিটের। আরেকজন রিকশাওয়ালাকে জিজ্ঞেস করে আনিকা,
আনিকাঃ এই মামা, যাবেন বাড্ডা?
রিকশাওয়ালা ২: যামু, তয় ২০ টেহা বারায় দিয়েন আফা।
আনিকাঃ কি বলো! ২০ টাকা বেশী! এই টুকু পথের জন্য!?
রিকশাওয়ালা ২: কিছু করার নাই, গেলে চলেন। নাইলে নাই।

দৃশ্য ২
(আনিকার রুম। আনিকার মা আনিকাকে তার ঘরে এসে কথা বলছেন।)

আনিকার মাঃ আনিকা, তোর ভাইয়ের টিউশন ফি দিতে হবে মনে আছে?
আনিকাঃ জানি মা, তবে কিভাবে দিব সেটাই ভাবছি। বেতন দিতে যে আর দিন দশেক বাকি।
আনিকার মাঃ কি করে চলবে রে মা এভাবে? তুই একা এভাবে কাজ করে উপার্জন করছিস, তবুও সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
আনিকাঃ কি আর বলবে বলো মা, কপালের লিখন কি খণ্ডানো যায়? সেই ৮ বছর আগে বাবা রোড এক্সিডেন্টে মারা না গেলে আজ আমাদের হয়তো এত দুর্দশায় পরতে হত না।
আনিকার মাঃ এই অল্প কয়টা টাকাকে যে কত কায়দা করে সব কিছু সামলাতে হয়, তবু লড়াই করে যাই। বাস্তবতা আমাদেরকে এমন এক অবস্থায় এনে দাড় করিয়েছে, যেখানে শুধু লড়াই করে যেতে হবে জীবনের সাথে। হার মানা যাবেনা, হার মেনে যাওয়া মানেই মৃত্যু।
আনিকাঃ ইচ্ছে করে অন্যসব বান্ধবীদের মত বাঁচতে। যাদের অন্তত পেটের খাবার কোথা থেকে আসবে এই নিয়ে চিন্তা করতে হয়না। যাদের টাকা আছে আরো কত শত ইচ্ছে পূরণের জন্য। অথচ আমার ২-১ টি গুরত্তপূর্ণ প্রয়োজনের জন্য টাকা জমাতেও হিমসিম খেতে হয়।
আনিকার মাঃ তোর আদরের ছোট্ট ভাইটির জন্য টিউটর লাগবে। কিন্তু টিউটরের বেতন দেওয়ার ক্ষমতা যে নেই। নিজে শত কষ্ট করে পড়াশুনা করেছিস, কিন্তু ভাইটির জীবন এমন হোক সেটা মনে প্রাণে মেনে নিতে পারবি?
আনিকাঃ তাই! সেদিন না দিলাম টাকা?
আনিকার মাঃ ওইটা স্কুল ফি ছিল।
আনিকা আর কিছু বলেনা। নীরবে ঘরে থেকে বের হয়ে যায়, অথবা বলা যেতে পারে বের হয়ে আসতে বাধ্য হয়। মায়ের করা সব প্রশ্নের উত্তর নেই তার কাছে।

দৃশ্য ৩
(আনিকার ভাই সুমনের ঘর। সুমন টেবিলে পড়াশুনা করছে। আনিকা নিঃশব্দে পেছনে এসে দাঁড়ায়। )
আনিকাঃ পড়াশুনা কেমন চলে তোর?
সুমনঃ কিভাবে ভালো যাবে বলো? কিছু বিষয় একদম বুঝিনা। মাস্টারের কাছে পরতে পারলে ভালো হত।
আনিকাঃ কি বুঝিস না? আমাকে দে? আমি বুঝিয়ে বলে দিচ্ছি।
সুমনঃ তুমি পারবেনা আপু, তুমি বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে পড়াশুনা করনি। এসব না জানারই কথা তোমার।
আনিকাঃ ওহ! তাই বল। কি যে করি রে ভাই। আমি যে মহা বিপদের পড়ে আছি। দৈবেরও যেন সাধ্য নেই আমাকে রক্ষা করবে।
আনিকা যেভাবে এসেছিলো, তার চেয়ে নিঃশব্দে ঘরে থেকে বের হয়ে যায়।

দৃশ্য ৪
(ইউনিভার্সিটি ক্যান্টিন। আনিকা আর লামিসা বসে কথা বলছে)
লামিসাঃ কি রে? এমন মন মরা হয়ে বসে আছিস কেন? কিছু হয়েছে?
আনিকাঃ না রে, কি হবে বল। আমার জীবনটাই সমস্যায় জর্জরিত।
লামিসাঃ তুই এই চাকরিটা ছেড়ে অন্য কিছু কর। এভাবে তো পারবিনা চলতে।
সামান্য কয়টা টাকা দিয়ে তোদের কিভাবে চলে!
আনিকাঃ বললেই তো করা হয়না, নতুন কিছু করা তো এত সহজ না লামিসা।
পথ খুঁজে বেড়াচ্ছি। আলোর সন্ধান কি মিলবেনা?
লামিসাঃ অবশ্যই মিলবে। আল্লাহর উপর ভরসা রাখ।
আনিকা কিছু না বলে বিদায় নিয়ে ক্লাসে চলে যায়। লামিসা আনিকার দিকে তাকিয়ে থাকে অপলক।

দৃশ্য ৫
(গুলশানের একটি জনাবহুল সড়ক। আনিকা আজকেও অপেক্ষা করছে। ট্রাফিক জ্যামের কারণে তার অফিসে যেতে কিছুটা হলেও দেরী হয়ে যাবে।)

আনিকাঃ আজকেও এতো জ্যাম! ট্রাফিক জ্যামের কারণে তার অফিসে যেতে কিছুটা হলেও দেরী হয়ে যাবে। ক্ষতি নেই তাতে, কেউ কিছু বলার নেই।

আনিকাঃ (মনে মনে ভাবে) অফিসে আনিকাই সবচেয়ে উঁচুপদে অধিস্টিত আছে। আর এই অফিসটি তার ফ্যাশন হাউসের অফিস। সেই যে ৮ বছর আগে ছোট্ট একটি দোকান থেকে শুরু হয়েছিল আনিকার পদযাত্রা, আজ ১২টি দোকানের মালিক সে। সবগুলো দোকান ঢাকার গুরুত্তপূর্ণ জায়গাগুলোতে। ছোট্ট ভাইটি আমেরিকাতে নামীদামী ইউনিভারসিটিতে পড়াশুনা করছে। সাফল্য চূড়া আজ আনিকার নখদর্পণে। আনিকার অসামান্য পরিশ্রম আর চেষ্টা আজকে তাকে এই সাফল্য এনে দিয়েছে। কঠিন বাস্তবতা তার স্বপ্নগুলো আর সুন্দর ভাবে সত্যি করে তুলতে অবদান রেখেছে। আনিকা একটা কথা জানে, “জীবনে থেমে যাওয়া বলতে কিছু নেই, থেমে যাওয়া মানেই জীবন যুদ্ধে হেরে যাওয়া”।
রাস্তার জ্যামে একটা আধবয়সী মহিলাকে দেখে চেনা চেনা মনে হয়। আনিকা নিজের গাড়ির গ্লাস খুলে ডাক দেয়।
আনিকাঃ লামিসা না? এদিকে আয়?
লামিসাঃ উম। না মানে। আরেহ, আনিকা না? কি থেকে কি হয়ে গেছে?
আনিকাঃ সব খুলে বলব। গাড়িতে উঠে আয়।
লামিসা গাড়িতে উঠে বসে। আনিকা তার গল্পের ঝুলি খুলে বসে। সাফল্যের কথা অন্য কাউকে জানানোর মধ্যেও অবারিত আনন্দ লুকিয়ে থাকে। গাড়িটি জ্যাম ছেড়ে খালি রাস্তায় ছুটে চলে দুর্বার গতিতে।

(সমাপ্ত)

Similar Documents