Free Essay

মধ্যরাতের ডোরবেল !

In:

Submitted By opuroni69
Words 1218
Pages 5
মুরগীর মাংসের টেষ্ট নাকি ঠিক সময় লবন দেওয়ার উপর নির্ভর করে । মা বলে মাংস কষানোর ঠিক আগে লবন দিতে হয় । কিন্তু এই একটা কাজই আমি ঠিক মত পারি না । ইতি মধ্যে দুইবার লবন দেওয়া হয়ে গেছে তবুও আমার কাছে মনে হচ্ছে যে লবন মনে হয় ঠিক মত হয়নি । তৃতীয় বার লবন দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে । মাংসে আর কতটুকু লবন দিবো এই যখন ভাবছি তখনই ডোরবেলটা বেজে উঠল ।
এই সময়ে কে এল ? কারো তো আসার কথা না । আর ছুটির দিনে মানুষ জন ঠিক আমার বাড়ির দিকে পা মাড়ায় না । কারন তারা খুব ভাল করে জানে ছুটির দিকে আমার একটু রান্নার বাতিক আছে । আর আমার রান্না যে একবার খেয়েছে সে দ্বিতীয় বাড় আর এদিকে পা দেয় নি । তাহলে কে এল ?

মনটা একটু খুশি হল । যাক,কেউ তো এসেছে ! যেই আসুক,তাকে দুপুরে না খাওয়িয়ে ছাড়ছি না ।
আগুন টা একটু কমিয়ে দিয়ে দরজা খুলতে গেলাম । দরজা খুলে খানিকটা চমকালাম । নিশি দাড়িয়ে আছে । হালকা নীল রংয়ের একটা শাড়ি পরা । মুখে খানিকটা লজ্জা মিশ্রত হাসি ।
খানিকটা লজ্জিত হয়েই বলল
-সরি খবর না দিয়ে চলে এলাম । আই হোপ ইউ ডোন্ট মাইন্ড ।
-না ঠিক আছে । আমার অবাক ভাব টা তখনও কাটেনি । নিশির এখন এখানে আসার কথা না । কোন ভাবেই না । তাহলে কেন এল ।
আমি হাসলাম । বললাম
-আসুন । আমার ঠিকানা পেয়েছেন কোথায় ?
-চেষ্টা করলে কি না পাওয়া যায় !
এই কথাটও আমি ঠিক বুঝলাম না । আমি এমন কেউ না যে আমার ঠিকানা খোজার জন্য চেষ্টা করতে হবে ।
নিশি ঘরের ভিতর ঢুকলো । এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে বলল
-এখানে একা থাকেন ?
-হুম । একাই !
হায় হায় আমার না চুলায় মুরগি !! আমি নিশিকে বললাম
-প্লিজ একটু বসুন । রান্না চড়িয়েছি তো !
-রান্না ?? আপনি নিজে রান্না করেন ?
নিশি খানিকটা অবাক হওয়ার কন্ঠে বলল ।
-প্রতি দিন না । এই ছুটির দিন গুলোতে নিজেই রান্না করে খাই ।
-আমি আসি আপনার সাথে ? কি রান্না করছেন একটু দেখি ??
-আসুন ।
আমি ওকে নিয়ে রান্না ঘরে নিয়ে এলাম ।

আবার সেই পরীক্ষা । লবন নিয়ে খানিকটা ইতস্তঃ করতে দেখে নিশি হেসে উঠল । বলল
-আপনি যদি কিছু মনে না করেন তাহলে আমি লবনটা দেখে দেই ?
আমি খুশি হই ।
নিশি কি চমৎকার ভাবে লবনটা দেখে দিল । আমার নিশির এই লবন টেষ্ট করার দৃশ্যটা দেখে কেন জানি খারাপ লাগল । আমি যদি ইচ্ছা করতাম তাহলে এরকমটা প্রতিদিন হতে পারতো !!
লবন টেষ্ট করার পর বলল
-আপনি তো খুব সুন্দর রান্না করেন ! বেশ স্বাধ হয়েছে । আমি কিন্তু দুপুরে না খেয়ে যাবো না ।
বলেই নিশি বাচ্চা মেয়েদের মত হেসে উঠল ।
নিশির কথা টা শুনে আমার মনটা ভাল হয়ে গেল । নিশি কত সহজ ভাবেই না আমার সাথে আমার সাথে কথা বলছে । কিন্তু কেন জানি না আমি খুব বেশি সহজ হতে পারছি না । পারার কথাও না ।

নিশির সাথে আমার পরিচয় হয় পারিবারিক ভাবেই । আমার জন্য তখন মেয়ে দেখা শুরু হয়েছে । বলতে গেলে নিশিই ছিল প্রথম । এবং সত্য কথা বলতে কি নিশিকে আমাদের সবারই খুব পছন্দ হয়েছিল । এমন কি আমারও । আংটি পড়ানোও হয়ে গিয়েছিল । যেদিন বিয়ের কথা বার্তা পাকা করতে যাবে ঠিক সেদিনই শোনা যায় যে নিশির নাকি আগে একটা বিয়ে হয়ে ছিল । এই কথা শোনার পর খোজ খবর লাগানো হয় । সত্যি খবরটা বের হয়ে গেল । সত্যিই নিশির আগে একটা বিয়ে হয়ে ছিল । ডিভোর্সও হয়ে গেছে । তারপর আর এগোই নি । ওখানেই থেমে গিয়ে ছিল সব কিছু ।
আজ তাও প্রায় মাস তিনেক আগের কথা ।এতো দিন পর নিশি আমার বাসায় এসে হাজির হল । ব্যাপারটা ঠিক বুঝলাম না ।
রান্নাবান্নার পর আরেকটা জিনিস আমাকে খানিকটা অবাক করল যে নিশি পুরো ফ্লাট টা ঘুরে ঘুরে দেখছিল । কোথাও কোন জিনিস এলোমেলো থাকলে তা গুছিয়ে রাখছিল । যেন ও নিজের নিজের ঘর গোছাচ্ছে । এটা আমাকে আরো খানিকটা অবাক করলো ।

সত্যিই নিশি দুপুর পর্যন্ত রয়ে গেল । দুপুরে খাবার সময় ও নিজেই নিজেই আামকে সব কিছু এগিয়ে দিচ্ছিল । একসাথে যখন খেতে বসলাম, নিজের কাছে মনে হচ্ছিল যেন নিশি সত্যিই আমার বউ ,স্বামী স্ত্রী একসাথে খেতে বসেছে ।
খাওয়ার সময় ও টুকটাক কথা বলছিল । হাসছিল ।
হটাৎ নিশি কেমন যেন গম্ভীর হয়ে গেল । বলল
-এরকম একটা সময় আমদের জীবনে সত্যি সত্যিই আসতে পারতো,তাই না ?
আমি কোন কথা বললাম না । আসলে আমর কোন কিছু বলার ছিল না ।
নিশি আবার বলল
-আমার ঐ লোকটার সাথে বিয়ে হয়েছিল,এটা আমার তোমার কাছে লুকানো ঠিক হয় নি । আমি কেন লুকিয়ে ছিলাম জানো,তোমাকে হারানোর ভয়ে ! আমার ভয় ছিল তুমি জানলে হয়তো তুমি আর আামকে বিয়ে করতে চাইবে না ।
নিশি চুপ করলো খানিক্ষন । আমি কি বলবো ঠিক বুঝতে পারছিলাম না । বিয়েটা ভাঙ্গার পরও আমি নিশির সাথে যোগাযোগ করতে চেয়েছিলাম । কিন্তু কি এক কারনে নিশি নিজেই আমার সাথে দেখা করে নি । জানি না কি কারন ছিল । তবে আমি ঠিকই ওকে বিয়ে করতে চেয়েছিলাম । এ নিয়ে আমার পরিবারে সাথে আমার বেশ মনমানিল্য হয় । তাদের একই কথা, দুনিয়াই এতো মেয়ে থাকতে একটা বিয়ে হওয়া মেয়ে বিয়ে করা কি দরকার । কিন্তু আমার মন তখন পুরোপুরিই নিশির উপর নিব্ধ । কারো কোন যু্ক্তিই আমার কান পর্যন্ত পৌছাবে না ।

নিশি আবার বলতে শুরু করলো
-জানো যে ছেলেটার সাথে আমার বিয়ে হয়ে ছিল তাকে আমি কোন দিন সরাসরি দেখি নি । ছবি দেখেছিলাম । আর ফোনে কথা হয়েছিল কয়েক বার । বাবাই পাত্র ঠিক করে এনেছিল,নিজেই বিয়ে দিল আবার একদিন বাবা নিজেই আমার ডিভোর্স লেটার টা আমার হাতে ধরিয়ে দিল । ঐ দিন আমার খুব বেশি খারাপ লাগে নি কিন্তু তোমার সাথে বিয়ে ভাঙ্গার পর আমার মন অনেক বেশি খারাপ হয়েছিল । অনেক বেশি খারাপ । মনে হত গলায় ওরনা পেঁচিয়ে মরে যাই ।
নিশির চোখে পানি দেখতে পেলাম । কিন্তু অল্প কিছুক্ষনের মধ্যেই ও সামলে নিলো । আমি বললাম
-একটা কথার জবাব দিবে ?
-বল ?
-ঐ সময় আমি যখন তোমার সাথে দেখা করতে চেয়েছিলাম , তুমি দেখা করলে না কেন?
-আমি জানি না কেন করলাম না । তবে ঐ সত্যটা লুকানোর জন্য নিজেকে ব্ড় ছোট মনে হচ্ছিল তোমার কাছে !
-তাহলে আজ কেন এলে ?
-তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছা করছিল । আর যাবার আগে শেষ বারের মত তোমার সাথে দেখা করতে ইচ্ছা হল । আর .....।
-যাবার আগে মানে ? কোথায় যাচ্ছ?
-বাইরে এমবিএ করার জন্য আমার একটা ফান্ডিং এসছে । আজ রাতে আমি চলে যাবো ।
আমি কিছু বলতে পারলাম না । কেবল মনে হল কোথাও যেন কি একটা শূন্যটা অনুভব হচ্ছে ।
নিশি আমাকে বা হাতটা তুলে দেখালো । বলল
-এটা চিনতে পারো ?
আমি তাকিয়ে দেখি আমর দেওয়া ঐ বিয়ের ? আংটিটা ।
নিশি বলল
-এটা আমি তোমার কাছে চেয়ে নিতে এসেছি । এটা আমার কাছে থাক ।
আমি আর কিছু বলতে পারলাম না ।
নিশি যখন চলে যাচ্ছিল আমি খুব চেষ্টা করছিলাম স্বাভাবিক থাকার । কিন্তু ঐ সময়ে ওর প্রতি যে আবেগ সৃষ্টি হয়েছিল সেটা আমাকে কিছুতেই স্বাভাবিক থাকতে দিচ্ছিল না ।
খুব চেষ্টা করছিলাম চোখ দিয়ে যেন পানি না পরে কিন্তু খনিকটা পানি বের হয়েই গেল । নিশি কেবল ঐ একফোটা পানি স্পর্শ করে বলল
-যে টুকু তোমার কাছ থেকে নিতে এসেছিলাম তার থাকে অনেক বেশি কিছু নিয়ে যাচ্ছি । তুমি ভাল থেকো ।
ও চলে গেল ।

আমি কেবল তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলাম । একবার মনে হল থামাই । ওকে যেতে না দিই কিন্তু সেই অধিকার কি আমার আছে ? নেই হয়তো । ঐ সময় যদি আর একটু জোর করতাম মা বাবা নিশ্চই মেনে নিত !!

বিষন্ন মন নিয়েই পুরো বিকেলটা কাটলো । রাতে না খেয়েই শুয়ে পরলাম । কিন্তু নিশি কে মন থেকে বের করতে পারলাম না কিছুতেই । আামর মনে হচ্ছে ওকে হয়তো আর ভুলতেই পারবো না কিছুতেই ।

রাত তিনটার দিকে আবার আমার ডোরবেলটা বেজে উঠল । সবে মাত্র ঘুম এসেছিল । বিরক্তি নিয়ে দরজা খলে দেখি..................
দেখি.............. নিশি দাড়িয়ে । এক গাদা ব্যাগ নিয়ে ।
প্রথমে ভাবলাম স্বপ্ন দেখছি ।
নিশি কোথা থেকে আসবে এখন ?
কিন্তু ঘুমের রেশ কাটার পরও যখন দেখি নিশি দাড়িয়েই আছে তখন কেবল এই কথাটাই বললাম
-তুমি এখানে কেন?
-কি করবো আমার যাওয়া দেখে ভেউ ভেউ করে কাঁদতে আাবম্ভ করলে,ছেড়ে যাই কিভাবে ??
-আমি কখন ভেউ ভেউ করে কাঁদলাম ?
-হয়েছে নাও । এখন ব্যাগ গুলা ধর । আমার খুব ঘুম পাচ্ছে । জানি না বাবা যখন জানতে পারবে আমি যাই নি তখন আমাকে কি করবে !!
নিশি ব্যাগ গুলা রেখেই ঘরে ঢুকে পড়ল ।
আমি এই মধ্য রাতে কুলির কাজ করার জন্য প্রস্তুতি নিলাম .......

Similar Documents

Free Essay

Ghost Stories

...।। ভূত, প্রেত, অশরীরী, আত্মা, নিয়ে কিছু কথা ।। by ।। ভূতুড়ে গল্প ।। on Tuesday, July 26, 2011 at 7:39pm ভূত, ইংরেজীতে Ghost, যার উৎপত্তি পুরাতন জার্মান ভাষায় gaistaz শব্দ থেকে। এর অর্থ রাগ,ভয়।   সুদুর অতীত থেকে ঈশ্বরের প্রতিপক্ষ হিসেবে জ্বীন-ভুত-শয়তান পরিচিত। বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ থেকে লোকগল্প সবকিছুতেই ভুত শব্দটা একটা ভয়ের শিহরণ জাগানো আমেজ নিয়ে আসে।   এই উপমহাদেশে ভুত বলতে অতৃপ্ত আত্মাকে বুঝি। কোন কারনে কোন ব্যাক্তির অস্বাভাবিক মৃত্যু হলে সে ভুত হয়ে যায়,এই আমাদের বিশ্বাস।   বিভিন্নক্ষেত্রে ভুতের বিশ্বাসগুলি -   মেসোপটমিয়া- মৃত্যুর পর মানুষের স্মৃতি আর ব্যাক্তিত্ব যখন দেবতার কাছে চলে যায়,তখন সে ভুত হয়ে যায়। তাদের খাদ্য-পানীয় দিয়ে খুশী করতে হত,নয়তবা জাতিতে বিপর্যয় নেমে আসবে।   মিশর- প্রাচীন মিশরীয়রা একেবারে মৃত্যুকে মানত না। প্রথমবার মৃত্যুকে তারা আফটার লাইফ বলত। পূনর্বার মৃত্যু যদি তারা কামনা করে তবেই সম্পূর্ন মৃত্যু হত। আফটার লাইফে মৃতের আত্মাকে ভুতের সাথে কল্পনা করা যায়। ফারাও Akhenaten পূর্ণমৃত্যু কামনা করে নাই,তাই সে ভুত। আধুনিক মিশরিয়রাও তার ভুতের দেখা পেয়েছে বলে দাবী করে।   গ্রীস- হোমারের অডেসি আর ইলিয়ডে ভুতকে বাষ্পের মত মিলিয়ে যাওয়া অপার্থিব বস্তু হিসেবে কল্পনা করা হয়েছে। মেডিভেল ইংল্যান্ড- মধ্যযুগে ইংল্যান্ডে এই ভুত আর ভুতের আছর নিয়ে অনেক রোমহর্ষক হত্যাকান্ডের ঘটনা রয়েছে। ডাইনী হত্যা নামক আনুষ্ঠানিক ভাবে অসংখ্যক নারী-পুরুষকে হত্যার প্রমান পাওয়া যায়।   আমরা এইবার ভারতীয় উপমহাদেশের ভুত নিয়ে কথা বলি-   ভুত-প্রেত এক স্বতন্ত্র জাতি বিশেষ। বলা হয় যে মরার পর মানুষ তার কর্মফল অনুযায়ী ভুত বা অশরীরী আত্মা হয়ে দেখা দেয়। এদের নিজেদের...

Words: 251886 - Pages: 1008